বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত ঐতিহ্যবাহী এক প্রাচীন জনপদ বগুড়া জেলা। নাসিরউদ্দিন বগরা খানের নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয় বগড়া। যা কালের বিবর্তনে বগুড়াতে রুপান্তরিত হয়। এই বগুড়ায়। বগুড়াকে বলা হয় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। শুধু দইয়ের জন্যই বিখ্যাত না, অনেক দর্শনীয় স্থানও আছে এখানে। বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা এই পোস্টে তুলে ধরা হলো।
মহাস্থানগড়ঃ

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, গৌড়, পাল বৌদ্ধ রাজারা ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য বৌদ্ধ রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷।
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নগরী। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এটি পুণ্ড্র রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ছিল।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে আসেন। তিনি রাজা পরশুরাম । এই রাজা পরশুরাম রাম নামে ও পরিচিত ছিলেন
বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে৷ এরপর তারা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তারা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন৷
ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে আসেন ফকির বেশি দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এবং তার শীষ্য। ধর্ম প্রচারক শাহ্ সুলতান বলখী সম্পর্কে রয়েছে আশ্চর্য কিংবদন্তি। কথিত আছে, তিনি মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রাচীন পুন্ড্রনগরে প্রবেশ করার সময় করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটা বিশাল মাছের আকৃতির নৌকার পিঠে চড়ে। মহাস্থানগড় পৌছে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন, প্রথমে রাজা পরশুরামের সেনাপ্রধান, মন্ত্রি এবং কিছু সাধারণ মানুষ ইসলামের বার্তা গ্রহণ করে মুসলিম হয়, এভাবে পুন্ড্রবর্ধনের মানুষ হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে রাজা পরশুরামের সাথে শাহ সুলতানের বিরোধ বাধে এবং এক সময় যুদ্ধ শুরু হয়, ১০৪৩ সালে (হিজরী ৪৩৯) যুদ্ধে রাজা পরশুরাম পরাজিত এবং মৃত্যু বরন করেন। বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাজার মেয়ে রাজকন্যা শিলাদেবী করতোয়া নদীতে ডুবে মরেন। তার ডুবে যাওয়ার আশেপাশের অঞ্চলটি শিলা দেবীর ঘাট হিসাবে পরিচিত।
শাহ সুলতান বলখির মাজারঃ

মহাস্থানগড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের মাজার। কথিত আছে এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের বলখ প্রদেশ থেকে মাছের পিঠে চড়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। ১০৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘরঃ

বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে আর মহাস্থানগড়ের কাছে গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রামের সংযোগস্থলেই রহস্যময় ও বিস্ময়কর ‘তিন কোণ’ বিশিষ্ট স্থাপত্য বেহুলার বাসরঘরের অবস্থান।
প্রাচীন বাংলার সুবিখ্যাত মঙ্গলকাব্য মনসামঙ্গলের প্রধান চরিত্র এবং চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী বেহুলা। অনেকেই বলে থাকেন, এখানেই হয়েছিলো বেহুলার বাসর। যা সেনযুগেরও অনেক আগে। তবে বর্তমানে গবেষকদের মতে, এটি ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৌদ্ধমঠ
কিংবদন্তির গল্পগাথা যে বেহুলা-লখিন্দরকে নিয়ে, সেই বেহুলা ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের মেয়ে। ওখানকার ঐতিহাসিক এক জমিদার বাড়ির দুলালী কন্যা ছিলেন অনিন্দ্য রূপে -গুণের অধিকারিণী বিশ্বনন্দিত বেহুলা। ষোড়শ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর সতী-সাবিত্রী কিংবদন্তির নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর বাবার নাম বাছোবানিয়া ওরফে সায় সওদাগর। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আছে বেহুলার পৈতৃক ভিটায় জীয়নকূপ। আর বগুড়ার গোকূলে যুগের পর যুগ পাড়ি দিয়ে টিকে আছে তার বাসরঘর।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই স্থানটি পরিদর্শন করে থাকেন। এটির সাথে যে মিথ বা কিংবদন্তী জড়িয়ে আছে যে বেহুলার বাসরগর, সেটিও পর্যটকদেরকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে। সবকিছু ছাপিয়ে প্রচীনকাল থেকেই লোকমুখে পরিচিত লোককথার সেই মনাসামঙ্গল কাব্যের বেহুলার বাসর হিসেবেই। বগুড়ার মহাস্থানগড় দেখে ফিরবার পথেই বেহুলার বাসর ঘর দেখে ফিরতে পারবেন।
মহাস্থানগড় জাদুঘরঃ

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি জাদুঘর। পরবর্তী সময়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশোনার উদ্যোগ নেয়। সেখানে আছে পুরোনো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি, মূল্যবান পাথর, মার্বেল, পোড়া মাটির পুতুল, নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ প্রাচীন ও মূল্যবান নিদর্শন।
জিয়ৎ কুণ্ডঃ

এটি মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি কূপ ও অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। লোককাহিনি অনুসারে, এই কূপের পানিতে ছিল অলৌকিক ক্ষমতা। যা পান করলে নাকি মৃত ব্যক্তিও জীবিত হয়ে যেতেন! কথিত আছে, রাজা পরশুরাম যখন শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তখন রাজা পরশুরাম তার সৈন্যদের এই কূপের পানির মাধ্যমে আবার জীবিত করতেন। শাহ সুলতান বলখি এ বিষয়টি জানার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পরবর্তীকালে নাকি একটি কাক এক টুকরা মাংস মুখে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটি কূপে পড়ে যায়। তারপর থেকে কূপটির পানির অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
খেরুয়া মসজিদঃ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল খেরুয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণ নিয়ে সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। প্রায় ৪৩০ বছর পুরোনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজও টিকে রয়েছে। চুন-সুরকির ব্যবহারে তৈরি এই মসজিদের পূর্বদিকের দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে এখনো নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় হয় এবং খেরুয়া মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত রয়েছে।
শিলাদেবীর ঘাটঃ
এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার পূর্বে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। লোককাহিনি অনুযায়ী, শীলাদেবী ছিলেন রাজা পরশুরামের মেয়ে। শাহ সুলতান বলখি মাহিসাওয়ার, রাজা পরশুরামকে পরাজিত করার পর শীলাদেবী এই স্থানে জলে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমীতে এই স্থানে স্নান করে থাকেন।
ভাসু বিহারঃ
মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে এটি অবস্থিত। এটি ‘নরপতির ধাপ’ হিসেবেও বেশ পরিচিত ও অন্যতম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন। ধারণা করা হয়, এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
গোবিন্দ ভিটাঃ
গোবিন্দ ভিটা বাংলাদেশের বৃহত্তর বগুড়াতে অবস্থিত একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মহাস্থানগড় দুর্গ নগরীর প্রাচীরের অদূরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত গোবিন্দ ভিটা নামক একটি অসমতল ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালিয়ে ২০০/১২৫’ পরিমাপের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন হস্তান্তরযোগ্য প্রত্ননিদর্শণ, ইটের মাপ ব্যবহৃত মসল্লা, স্থাপত্যিক বির্নাস ইত্যাদির ভিত্তিতে অনুমিত হয় যে, মন্দিরটি খ্রীষ্ঠীয় আনুমানিক সাত শতকে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরটিতে একাধিকবার পুনঃনির্মাণের নিদর্শণ লক্ষ্য করা যায়। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘‘করতোয়া মহাত্ন্য’’ এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ রয়েছে। এটি গোবিন্দ বা বিষ্ণু মন্দির নামে পরিচিত হলেও এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যাইনি যার ওপর ভিত্তি করে এটিকে বৈষ্ণব মন্দির বলা যেতে পারে।
মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়ামঃ

মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম বগুড়ার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। দেশের উত্তর জনপদের কেন্দ্রস্থল বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র করতোয়া নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে নবাব প্যালেসের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে এই মিউজিয়াম অ্যান্ড পার্ক। ২০১৬ সালের মে মাসে এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
১৯৯৮ সালের মে মাসে বগুড়ার নবাব মোহাম্মাদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম অ্যান্ড অ্যামাউজমেন্ট পার্ক বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। নবাব প্যালেসে প্রবেশ করলে দেখা যাবে তরুণী-কৃষাণী বধূরা অপেক্ষা করছে তার প্রেমিক কৃষাণের জন্য। নবাববাড়ির চারদিকে পাতাঝরা গাছে পাখি বসে আছে। কোনো কোনো গাছে পাখিরা ঠোকাঠুকি করছে। পুরনো প্যালেসটি বিশাল এক জাদুঘর। বিনোদন কেন্দ্র, জোড়া ঘোড়ার গাড়ি, কোচওয়ানদের হাতে চাবুক। বগুড়ার নবাববাড়ির অতীত দিনের নেপালি দারোয়ান, মালী, পালকি, বেহারা, কোচওয়ান, টমটম, সিংহ, বাঘ, কুমির, ময়ূর, রাজহাঁস, বিভিন্ন পাখির প্রতিমূর্তি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নবাববাড়ি বিরাট হলরুমের দেয়ালে নবাব সৈয়দ আবদুস সোবাহান চৌধুরী, নবাবজাদা সৈয়দ আলতাফ আলী চৌধুরী, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মাদ আলী, সৈয়দা তহুরুন নেছা চৌধুরানী, সৈয়দা আলতাফুন নেছা চৌধুরানী।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ৩০ টাকার টিকিট কিনে মূল গেট পার হতে হয়। এরপর ট্রেন, দোলনা, বিমানে চড়া এবং নবাববাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে টিকিট প্রয়োজন হয়। নবাব সৈয়দ আলতাফ আলী চৌধুরীর অবর্তমানে তার ছেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সৈয়দ মোহাম্মদ আলী নবাববাড়ীর একমাত্র উত্তরাধিকার ছিলেন। পরবর্তীতে তার তিন ছেলে সৈয়দ হাম্মদ আলী, সৈয়দ হামদে আলী ও সৈয়দ মাহমুদ আলী এবং মেয়ে সৈয়দা মাহমুদা আলী পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে নবাব বাড়ির মালিক হন। বর্তমানে এই মিউজিয়াম দেখাশোনা করেন সৈয়দ মোহাম্মাদ আলীর ছেলে সৈয়দ হামদে আলী চৌধুরী।
মমইন বিনোদন পার্ক ও রিসোর্টঃ

মোমো ইন পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট (MOMO INN PARK & RESORT) বগুড়ার অতিথিদের জন্য বিলাসবহুল এবং আধুনিক এক আবাসনের নাম। বগুড়া জেলার একমাত্র পাঁচ তারকা মানের এই হোটেলটি আন্তর্জাতিক মানের অতিথি সেবা, সুন্দর সাজসজ্জা এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি বগুড়ার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
মোমো ইন-এর ২০৪টি সুসজ্জিত রুম এবং স্যুইট বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত, যা প্রতিটি অতিথির বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী সাজানো। ডিলাক্স সিঙ্গেল থেকে শুরু করে প্রিমিয়ার স্যুইট পর্যন্ত, প্রতিটি রুমেই রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং আরামদায়ক পরিবেশ।
শুধু থাকার জন্যই নয়, বিনোদনের জন্যও মোমো ইন-এর রয়েছে নানাবিধ আয়োজন। সুইমিং পুল, জেন্টস ও লেডিস পার্লার, রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স রুম, হেলিপ্যাড, স্পা- সবকিছু মিলিয়ে এটি একটি সম্পূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র। এছাড়াও রয়েছে ওয়াটার পার্ক, ইকো ভিলেজ, বিভিন্ন রাইড, সিনেমা হল এবং বার। বুফে রেস্টুরেন্ট এবং কফি শপে উপভোগ করতে পারবেন সুস্বাদু খাবার।
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কঃ
বগুড়ার শহরের মধ্যেই আছে ছোটোখাটো সুন্দর একটি পার্ক যার নাম ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক। এই পার্কের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা. প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন। এই পার্কে অনেক গুলা রাইড আছে। পার্কের মধ্যে মনোরম পরিবেশে সবাই ঘুরে দেখে এবং উপভোগ করে। শিশু,বালক,বালিকা, যুবক,যুবতী, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ প্রায় সব ধরনের মানুষ এই পার্কে আনন্দ উল্লাস করার জন্য এখানে এসে ভিড় জমায়। নিরিবিলি পরিবেশে এই পার্কে পর্যটকরা এই পার্কে ঘুরাঘুরি করে থাকে। ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কের পাশে রয়েছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, ফুটবল স্টেডিয়াম, কৃষি ফার্ম। বগুড়া শহরের খান্দার এলাকায় একটি জনবহুল অঞ্চল এটি।
সাইবানি বিবির দরগাঃ
বগুড়ার চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা নিজস্ব গাড়ি করে যেতে পারেন সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের সাইবানি বিবির দরগায়। প্রায় ১২ একর জায়গা জুড়ে এ দরগাটি প্রতিষ্ঠিত। লোকমুখে জানা যায়, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দরগাটির চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্য। পুরোনো এই দরগাটি মোঘল স্থাপত্য রীতির চমৎকার একটি নিদর্শন। একটিতে বড় ও উঁচু আকুতির গম্বুজ থাকলেও অন্যটিও প্রায় গোলাকার। দরগাটিতে টেরাকোটার (পোড়ামাটির ফলক) কাজ করা। দরগাগুলোর চারপাশের তিন পাশেই ছোট ছোট প্রবেশপথ। ভিতরে দুই বা তিনজন অবস্থান করার মতো জায়গা। দেখতে অনেকটা শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ইমামবাড়ার মতো। যাদের প্রাচীন স্থাপত্য টানে তারা চাইলে এই জায়গা ভ্রমণ করতে পারেন।
প্রেম যমুনার ঘাটঃ
বগুড়ার যমুনার তীরবর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দি। নদী-বিধৌত সারিয়াকান্দির মানুষদের সুখ-দুঃখ একটাই, তা হলো যমুনা। যমুনার ভাঙন থেকে সারিয়াকান্দিকে রক্ষার্থে তৈরি করা হয় গ্রোয়েন বাঁধ। আর এই বাঁধই হয়ে ওঠে বগুড়ার আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ, জেলেদের নদীতে মাঝ ধরা, ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত ও ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা, স্টিমার, স্পিড বোট দেখতে দেখতে কেটে যাবে সুন্দর কিছু মুহূর্ত। আর পাশেই ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে তো রয়েছেই টাটকা মাছসহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার। বগুড়ার চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়ায় অটোরিকশা করে সরাসরি আসতে পারবেন এই জায়গায়।
যোগীর ভবণঃ
কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ উত্তরে পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ঐতিহাসিক যোগীর ভবন অবস্থিত। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যোগী ও সাধু-সন্নাসীদের আনা-গোনা ছিল বলে এ স্থানটির নামকরণ ‘‘যোগীর ভবন’’ বলে স্থানীয়ভাবে জানা যায়। এখানে রয়েছে একটি আশ্রম, ০৪ টি মন্দির, কানচ কূপ, একটি ইঁদারা, ধর্মটঙ্গী এবং অগ্নিকুন্ড ঘর। যোগীর ভবনের আশ্রম ও মন্দির নির্মানের তেমন কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও এখানে বিভিন্ন দেয়ালের গায়ে ৮৮৪, ১১১৩, ১১১৯ খৃষ্টাব্দ লেখা রয়েছে যা থেকে অনুমান করা যায় যে, এটি ৮৮৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ১১১৩, ১১১৯ খৃষ্টাব্দে এটির সম্ভবতঃ সংস্কার করা হয়েছিল। জনশ্রুতিতে আরোও জানা যায় বাংলার কিংবদন্তী নায়িকা বেহুলার মৃত স্বামী লক্ষ্ণীন্দর এখানকার কানচ কূপের পানির মাধ্যমে জীবন ফিরে পেয়ে ছিলেন। যোগীর ভবন মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা-পার্বণ করে থাকেন। সংস্কারের অভাবে এখন এটি ধবংসের পথে।
কীভাবে যাবেন বগুড়া?
ঢাকাসহ দেশের যে কোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনে চড়ে যেতে পারেন বগুড়া। শ্যামলী পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, ডিপজল এক্সপ্রেস, মানিক এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাসে বগুড়া পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে ঢাকা-বগুড়া রুটের ‘লালমনিরহাট এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেন বেছে নিন।
থাকবেন ও খাবেন কোথায়?
বগুড়ায় ফাইভ স্টার হোটেল মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, নর্থওয়ে মোটেলসহ আরো বিভিন্ন হোটেল আছে। যে কোনো একটিতে থাকতে পারেন। এছাড়া খাবারের জন্য বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত হোটেল আকবরিয়া, সেলিম হোটেলসহ নানা মানের হোটেল পাবেন।