বগুড়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য যেমন সমৃদ্ধশালি তেমনি যুগে যুগে এ অঞ্চলে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জন্ম গ্রহণ করেছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের অবদান অপরিসিম। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যাদের অবদানের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো :
শহীদ প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান

জন্ম ও জন্মস্থান:
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলাধীন বাগবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মনসুর রহমান এবং মাতার নাম জাহানারা খাতুন।
অবদান:
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯৫৩ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কাকুলস্থিত পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেনেন্ট পদবীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত হন এবং তার ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি সিতারা-ই-জুরাত এবং নয়টি তামঘা-ই-জুরাত পদক লাভ করে।
মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তারপর ২৬ মার্চ বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের সহায়তায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হন এবং পূর্ব ঘোষিত সামরিক আইনের অধীনে উপপ্রধান সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। এই দিনটি পরবর্তীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পরিচিতি পায়।
তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ণ করেছিলেন। এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরনির্ভরশীলতা কমানো, আয়ের সুষম বন্টন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া, সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পুনর্খনন করেন।
দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য সার্ক প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।
মোহাম্মদ আলী

সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বগুড়া (১৯০৯ – ১৯৬৩) একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ। তাঁর পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী হলেও প্রথমে উল্লেখিত নামেই তিনি সুপরিচিত। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর জন্মস্থান বগুড়া। তার পরিবার বাংলার ধনবাড়ির নবাব পরিবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন এবং লেখাপড়া শেষ করে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৩৭ তে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি খাজা নাজিমুদ্দিন-এর মন্ত্রী সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী হবার ঠিক আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোড়ন তৈরি করেন। প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি সংবিধান প্রণয়ন কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন সংক্রান্ত একটি সূত্র আইনসভায় পেশ করেন।[১] তার এই সুত্রটি পাকিস্তানের ইতিহাসে “বগুড়া ফর্মুলা” নামে পরিচিত। অক্টোবার ৭, ১৯৫৩ সালে টি আইনসভায় পেশ করা হয়। তের দিন ধরে উপর আলোচনা চলে। নভেম্বার ১৪ , ১৯৫৩ সালে সংবিধানের খসড়া তৈরির ব্যাপারে একটি কমিটি গঠিত হয়। খসড়া চূড়ান্ত করার পূর্বেই গুলাম মুহাম্মদ আইনসভা ভেঙ্গে দেন। যদিও এসময় মোহাম্মদ আলি বগুড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নতুন আরেকটি মন্ত্রিসভা নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যান। ১৯৫৪ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তার এই নতুন সরকার নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়। ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে গোলাম মোহাম্মদ পদত্যাগ করেন। সৈয়দ ইস্কান্দার মীর্জা নতুন গভর্নর জেনারেল হন। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের আগস্ট ৮ তারিখে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা সৈয়দ মোহাম্মদ আলি বগুড়াকে পদত্যাগে বাধ্য করেন।
মোহাম্মদ আলী বগুড়া এর বাসভবন
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাশ্মীর ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি নেহরুকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক দূরীকরণের আহ্বান জানান।
১৯৬২ সালে তিনি আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন। ১৯৬৩ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ আলী বগুড়া মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) এর বগুড়া জেলায় কবর দেওয়া হয়।
তারেক রহমান

তারেক রহমান হলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দৈনিক দিনকাল সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশক (ভারপ্রাপ্ত)। তিনি সাধারণত তারেক জিয়া নামে পরিচিত; যার শেষাংশটি এসেছে তার পিতা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম থেকে। তার ডাকনাম পিনু।
তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দম্পতির প্রথম সন্তান। তারেক শিক্ষা জীবনের শুরুতে বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকাতে পড়াশোনা শুরু করেন এরপর সেন্ট যোসেফ কলেজ এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশ করেন। শুরুতে বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করে দ্রুত সাফল্য লাভ করেন এবং পরে নৌ-যোগাযোগ খাতেও সফলভাবে বিনিয়োগ পরিচালনা করেন।
রহমান ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া জেলা শাখার গাবতলী উপজেলায় প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন । ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়, যখন সামরিক সরকার থেকে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের দিকে রূপান্তর চলছিল, রহমান সক্রিয়ভাবে দলের পক্ষে সমর্থন সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সময়কালে, তিনি বগুড়ার বিএনপি ইউনিটগুলিকে সক্রিয়ভাবে সংগঠিত করেছিলেন এবং রাজনীতিকে আরও উৎপাদন- এবং উন্নয়ন-মুখী করার জন্য অন্তর্নিহিত সংস্কৃতি পরিবর্তন করেছিলেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাফল্য এবং নতুন সরকার গঠনের পর, রহমানকে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দলের একজন সিনিয়র পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে, তিনি উচ্চতর পদ গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেতে পছন্দ করতেন। বহু বছর ধরে, তিনি বিএনপির বগুড়া ইউনিটগুলির উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়, দলের তৃণমূল এবং সিনিয়র নেতৃত্ব রহমানকে বগুড়া থেকে একটি নির্বাচনী এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে তার কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার এবং তার মায়ের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমানকে জেষ্ঠ্য ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ওই কাউন্সিলে তার একটি ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি তার শারীরিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তারেক রহমান শুধু রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য নন, বরং বিএনপির সংগঠক এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নানা বিতর্ক ও সংকট মোকাবিলা করেও তিনি নিজেকে দলের একজন কার্যকর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরানী

সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত নবাব পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতাঃ মরহুম আব্দুস সুবাহান চৌধুরী (বগুড়া জেলার একমাত্র নবাব) এবং মাতা মরহুমা তহরুন্নেছা চৌধুরী (বগুড়ার প্রসিদ্ধ জমিদারের কন্যা)।
মরহুমা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী পিতা-মাতার একমাত্র আদরের দুলালী ছিলেন। তিনি একাধারে চার জমিদারের মালিকানা প্রাপ্ত হয়েছিলেন (প্রথমতঃ পিতা নবাব মরহুম আব্দুস সুবাহান চৌধুরীর পৈত্রিক মালিকানা, দ্বিতীয়তঃ মাতা মরহুমা তহরুন্নেছা চৌধুরী বিপুল সম্পত্তি, তৃতীয়তঃ খালা যুবায়দাতুন্নেছা চৌধুরী এবং মামা ছাওয়ার আলী চৌধুরীর সম্পত্তি। (এখানে উল্লেখ্য যে খালা যুবায়দাতুন্নেছা চৌধুরী এবং মামা ছাওয়ার আলী চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন)।
মরহুমা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী বাংলা, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী এবং ব্যুৎপত্তিসম্পন্না ছিলেন।
খুব অল্প বয়সে আলতাফুন্নেছা চৌধুরী টাঙ্গাইল ধনবাড়ির জমিদার নবাব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর তিনি স্বামীসহ পিতার গৃহে অবস্থান করতেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তাদের ঘর আলো করে একমাত্র পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। নিজের (আলতাফুন্নেছা চৌধুরী) এবং স্বামি নওয়াব আলী চৌধুরীর সঙ্গে মিল রেখে পুত্রের নাম আলতাফ আলী চৌধুরী’র নাম রাখেন। ইহার কিছুকাল পর তাদের সংসারে আরও একজন কন্যা সন্তান জন্মলাভ করেন। তাহার নাম রাখেন লতিফুন্নেছা চৌধুরী। পুত্র-কন্যা শৈশব অবস্থায় রেখে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে আলতাফুন্নেছা চৌধুরী অকালে মৃত্যু বরন করেন।
পিতা মরহুম আব্দুস সুবাহান চৌধুরী, কন্যা আলতাফুন্নেছা চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে দুঃখে ভারাক্রান্ত হন। তিনি কন্যার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বগুড়া শহরের কেন্দ্রস্থলে জলেশ্বরীতলায় মরহুমা আলতাফুন্নেছার নামে জমি দান করেন। বর্তমানে এই খেলার মাঠটি বগুড়া জেলার অন্যতম জনপ্রিয় খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত।
প্রফুল্ল চাকী
প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮) উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী এক তরুণ বিপ্লবী ও আত্মত্যাগী। ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার বিহার গ্রামের এক মধ্যবিত্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে প্রফুল্ল চাকী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজনারায়ণ ও মাতা স্বর্ণময়ী। তাঁর পিতা ছিলেন বগুড়ার নওয়াব পরিবারের একজন কর্মচারী। প্রফুল্ল চাকী মাত্র দুবছর বয়সে পিতাকে হারান।
মাতা কর্তৃক লালিত-পালিত চাকী তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলেই শুরু করেন। ১৯০৪ সালে তিনি রংপুরের জেলা স্কুলে ভর্তি হন। রংপুরে তিনি বান্ধব সমিতিতে যোগ দেন। এটি ছিল একটি স্থানীয় শরীরচর্চা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কার্লাইল সার্কুলার লঙ্ঘন করে ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য চাকী স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি রংপুরের জাতীয় স্কুলে ভর্তি হন। এসময়েই তিনি জিতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী ও ঈশানচন্দ্র চক্রবর্তী-র মতো বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং এর ফলেই তাঁর মাঝে উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে।
ঠিক এমনই এক সন্ধিক্ষণে যুগান্তর দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ রংপুর ভ্রমণে আসেন। বারীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে প্রফুল্ল চাকীর পরিচয় হয় এবং তিনি তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হন। এরপর ১৯০৭ সালে বারীন ঘোষ কলকাতায় গোপন বোমা কারখানা গড়ে তোলার সময় তিনি চাকীকে কলকাতায় নিয়ে যান।
এদিকে পূর্ববঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার বিপ্লবীদের প্রতি তাঁর হিংসাত্মক মানসিকতার জন্য জনগণের চরম ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। বারীন ঘোষ তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ফুলারের দার্জিলিং ট্যুরের সময় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় ও চাকীর ওপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়। কিন্তু ট্যুর বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে নি।
১৯০৮ সালে যুগান্তর সদস্যগণ কলকাতা প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। স্বদেশী আন্দোলনকারী ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধীদের প্রতি তাঁর পক্ষপাতমূলক ও কঠোর আচরণের জন্য তিনি মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। অন্য একজন তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে চাকীকে একাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কিংসফোর্ডকে সেশন জজ হিসেবে মুজাফ্ফরপুরে বদলি করা হয়। তাঁরা দুজন মুজাফ্ফরপুরে গিয়ে কিংসফোর্ডকে খুব কাছ থেকে কয়েকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এরপর তাঁদের পরিকল্পনা তৈরি করেন। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁরা ইউরোপীয়ান ক্লাবের প্রধান ফটকের সামনে আত্মগোপন করে কিংসফোর্ডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর কিংসফোর্ডের গাড়ির অনুরূপ একটি গাড়ি গেটের কাছ আসলে তাঁরা বোমা নিক্ষেপ করে গাড়িটি উড়িয়ে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি ছিল মিসেস ও মিস কেনেডির গাড়ি। ঘটনাস্থলেই তাঁরা দুজন মারা যান।
প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম পৃথক পৃথক ভাবে পলায়ন করেন। পরদিন সকালে সমস্তিপুর রেলওয়ে স্টেশনে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর প্রফুল্লকে সন্দেহ করে তাঁকে গ্রেফতারের জন্য উপস্থিত পুলিশের সাহায্য নেয়। প্রফুল্ল আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেই নিজের রিভলবার দিয়ে মাথায় দুবার গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
প্রফুল্ল চাকী ছিলেন প্রথম দিককার অন্যতম বিপ্লবী যিনি দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাঁর এই আত্মদান পরবর্তী প্রজন্মের বিপ্লবীদের প্রেরণা জুগিয়েছে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
১৯৪৩ সালে বগুড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি গল্পকার ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর উপন্যাস :চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াাব নামা। গল্প : দুধে ভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, অন্য ঘরে অন্যস্বর গ্রন্থ :সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু।
রোমেনা আফাজ
জন্ম ১৯২৬ সালে, বগুড়া শেরপুর
দেশের মেয়ে, কাগজের নৌকা, শেষ মিলন, আলেয়ার আলো, জানি তুমি আসবে, প্রিয়ার কন্ঠস্বর, ভুলের শেষে, রক্তে আঁকা ম্যাপ, মান্দিগড়ের বাড়ি, রঙ্গিয়া, হারানো মানিক, হুসনা, নীল আকাশ, কুন্ডী বাঈ প্রভৃতি উপন্যাস রচনা করেন।
মুশফিকুর রহিম
মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম (জন্ম: ৯ মে, ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের তিন ফরম্যটে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। সেপ্টেম্বর ২০১১ থেকে রহিম জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে অধিনায়ক ছিলেন। মূলত তিনি একজন উইকেট-রক্ষক এবং মাঝারিসারির ব্যাটার। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তথা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।
মুশফিকুর রহিমের বাবার নাম মাহবুব হাবিব ও মাতার নাম রহিম খাতুন। তিনি বগুড়া জিলা স্কুলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেষ করেন। ক্রিকেট খেলার সময়, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। তিনি ২০১২ সালে তার মাস্টার্স ডিগ্রি পরীক্ষায় বসেছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে তিনি জান্নাতুল কিফায়াতকে বিয়ে করেন
২০১৮ সালে নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে এর বিপক্ষে ২য় টেস্ট এ তার ও বাংলাদেশের হয়ে কোনো ব্যাটসম্যান এর হয়ে সর্বোচ্চ ২ টি ডাবল সেঞ্চুরি এবং উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে মুশফিক প্রথমবারের মত জাতীয় দলে সুযোগ পান। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তিনি আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নেন এবং ২০২৫ সালের মার্চ মাসে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য
জন্ম: ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭
পিনাকী ভট্টাচার্য একজন খ্যাতনামা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও চিকিৎসক। তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক শ্যামল ভট্টাচার্য ও সুকৃতি ভট্টাচার্য দম্পতির বড় সন্তান। পিনাকী ভট্টাচার্য বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পলিটিক্যাল এনালাইসিস সমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি করে থাকেন। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষা-কে তার ইউটিউব ভিডিও’র মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী সকলের মাঝে তিনি সফলভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর তার ১৯টি গ্রন্থ রয়েছে। বর্তমানে তিনি ফ্রান্স এর রাজধানী প্যারিসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছেন।
• মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬), বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান
• মহাদেব সাহা, সাহিত্যিক
• মমতাজুর রহমান তরফদার – ঐতিহাসিক
• মনোজ দাশগুপ্ত – কবি ও লেখক
• মাহফুজুর রহমান, চেয়ারম্যান, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ
• গাজীউল হক (১৯২৯-২০০৯), ভাষা সৈনিক
• এম আর আখতার মুকুল, (১৯২৯-২০০৪), লেখক এবং সাংবাদিক
• গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, রাজনীতিবিদ
• শফিউল ইসলাম সুহাস– জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়
• অপু বিশ্বাস, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী
• তরুণ মজুমদার, চিত্রপরিচালক
• হোসনে আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ
• আলী আকবর, উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
• আবু সাইয়ীদ, চলচ্চিত্র পরিচালক
• মাহমুদুর রহমান মান্না, রাজনীতিবিদ
• আব্দুল মান্নান, সংসদ সদস্য
• কাজী রফিকুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ
• হাছানাত আলী, অধ্যাপক
• রজিব উদ্দীন তরফদার, প্রজা আন্দোলনের গোড়া পত্তন করেন এবং বগুড়া জেলা প্রজা সমিতি গঠন করেন
• ফজলুল বারী, পাকিস্তান আমলে তিনি স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ পদেমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
• এ,কে মুজিবর রহমান, সমাজসেবক
• এম. শামছুল হক, কবি, লেখক ও সাহিত্যিক
• কে এম শমসের আলী, বি প্রতিভার কারণে তাকে কবিরত্ন ও সনেট বিষারদ উপাধি দেয়া হয়
• খুরশীদ আলম, একজন খ্যাতনামা গায়ক হিসেবে আধুনিক গান, রবীন্দ্র সংগীত এবং চলচিত্রের গান করেন।
• আজিজুল জলিল (পাশা),পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ চিত্র শিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়।
• তাজমিলুর রহমান,কবি, লেখক ও সাহিত্যিক
• হিরো আলম, চলচ্চিত্র অভিনেতা